দেখবো এবার জগৎটাকে (Dekhbo ebar jogot-ta-ke: A Bengali Blog)

দেখবো এবার জগৎটাকে (Dekhbo ebar jogot-ta-ke: A Bengali Blog)

Dekhbo Ebar Jogot-ta-ke is a bengali blog about some unknown interesting facts

Breaking

WE ARE RECRUITING CONTENT WRITER. CONTACT: 7003927787

Saturday, February 8, 2020

ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে বিরল নজির - সিনেমার জন্য তৈরি হল আস্ত একটা ভাষা

February 08, 2020 2
ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে বিরল নজির - সিনেমার জন্য তৈরি হল আস্ত একটা ভাষা
ভারতীয় সিনেমার সুদীর্ঘ ইতিহাসে নানাবিধ অবাক করা কাণ্ড আমাদের নজরে এসেছে। সিনেমা কে পর্দায় বাস্তবের মত ফুটিয়ে তুলতে অভিনেতা - নির্মাতারা চেষ্টার কসুর করেন না। চরিত্রের সাথে আত্মস্থ করার জন্য অভিনেতাদের নিজেকে মাসের পর মাস ঘরবন্দি রাখা, নিজের জীবন বাজি রেখে মারপিটের দৃশ্যে অভিনয় করা থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভারী প্রস্থেটিক মেক- আপ নিয়ে অভিনয় করার কথা আকছার শোনা যায়। কিন্তু সিনেমার প্রয়োজনে আস্ত একটা ভাষা সৃষ্টির নজির ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে বিরল, আর এই নজির সৃষ্টি করে যেই সিনেমা ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছে সেই সিনেমার নাম আমাদের সকলের অত্যন্ত পরিচিত। সিনেমাটি হল দক্ষিনী সিনেমা "বাহুবলি"। 

   দুই ভাগে তৈরি সিনেমাটির প্রথম ভাগ মুক্তির আগেই 'ব্লকব্লাস্টার' আখ্যা পেয়ে যায়। চারটি ভাষায় মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি প্রথম তিন দিনেই ১৬০ কোটি টাকার ব্যাবসা করে। এহেন তথ্য থেকেই বাহুবলির জনপ্রিয়তা আঁচ করা যায়। নির্মাতাদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে সিনেমাটি তৈরি করতে প্রায় তিন বছর সময় লাগে, শুধুমাত্র সেট তৈরি করতেই আনুমানিক ২০০ দিন সময় লাগে যা গড়ে ওঠে ২০০ একর জমির ওপর, সিনেমায় প্রায় ৮০০০ জুনিয়র আর্টিস্ট  কাজ করেছিল। এগুলি হল বাহুবলি সম্পর্কিত  বহু বিস্ময়কর তথ্যের  মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু তথ্য। 

বাহুবলি সিনেমার সেট


কিন্তু এই সমস্ত তথ্যের থেকেও যে ঘটনা এই সিনেমাকে আর পাঁচটা সিনেমা থেকে আলাদা করেছে এবং ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে দিয়েছে, তা হল সিনেমার উপজাতি চরিত্র 'কালকেয়া'- র জন্য সম্পূর্ণ নতুন এক ভাষা তৈরি করা হয়। নতুন এই ভাষার নাম দেওয়া হয়েছিল 'কিলিকিলি' এবং এই ভাষায় ছিল ৭৫০ টা শব্দ এবং ৪০ টা ব্যাকরনগত নিয়ম। বিদেশি ছায়াছবিতে আগেও নতুন ভাষা সৃষ্টির নজির রয়েছে, যেমন ' দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস' সিরিজের জন্য তৈরি 'এল্ভিস' ভাষা, জর্জ মারটিন্স এর 'আ সং অফ আইস অ্যান্ড ফায়ার'  সিরিজের জন্য 'ডথরাকি', ' ভালেরিয়ান' ভাষা। 

বাহুবলি সিনেমার উপজাতি চরিত্র 'কালকেয়া'


 কাল্পনিক এই ভাষা তৈরির কারিগর মদন কারকি, যিনি এই সিনেমার তামিল সংস্করণ এর জন্য গান ও সংলাপও লিখেছেন। কারকি অস্ট্রেলিয়া তে পি.এইচ.ডি. করার সময় অতিরিক্ত আয়ের জন্য বাচ্চা দেখভালের কাজ করতেন। এমনই একদিন দুই বাচ্চাকে নতুন ভাষা শেখানোর জন্য মজার ছলে নতুন এক ভাষা তৈরি করে বসলেন। সেই ভাষার নাম দেন 'ক্লিক', এবং প্রায় ১০০ টা শব্দ তৈরি করেন, যেমন ক্লিক ভাষায় 'মিন' শব্দের অর্থ 'আমি' এবং 'নিম' শব্দের অর্থ 'তুমি'। এমনকি কারকি সেই ভাষায় গান ও রচনা করেন। কালক্রমে তিনি নানা কাজের মাঝে এই ভাষার কথা ভুলে যান। 

মদন কারকি
পরবর্তীকালে বাহুবলি সিনেমার পরিচালক এস এস রাজামৌলী কারকি কে কালকেয়া চরিত্রের জন্য নতুন ভাষা সৃষ্টির পরিকল্পনা ব্যক্ত করলে কারকি তাকে ক্লিক ভাষার গল্প বলেন। রাজামৌলী  সাহেবের সেই ভাষা খুব ভালো লেগে যায়। 

পরিচালক রাজামৌলী 


সিনেমার প্রয়োজনে ক্লিক ভাষায় কিছু পরিমার্জন করা হয়। এই ভাবেই জন্ম হল 'কিলিকিলি' ভাষার। 

বাহুবলি সিনেমার অডিও প্রকাশের দিন কাল কেয়া চরিত্রে অভিনয় করা প্রভাকর কিলিকিলি ভাষা বলার একটি ভিডিও রইল আপনাদের জন্যঃ

 প্রতিবেদনটি আপনাদের কেমন লাগলো নিচে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করুন। এইরকম প্রতিবেদন আমাদের ব্লগে লেখার জন্যে যোগাযোগ করুন dejogot@gmail.com







Sunday, July 28, 2019

জানেন কী, স্বাধীন পাকিস্তানের বৈধ মুদ্রা ছাপা হত ভারত থেকে? পাকিস্তানের মুদ্রার জানা অজানা ইতিহাস।

July 28, 2019 0
জানেন কী, স্বাধীন পাকিস্তানের বৈধ মুদ্রা ছাপা হত ভারত থেকে? পাকিস্তানের মুদ্রার জানা অজানা ইতিহাস।
লর্ড মাউন্টব্যাটেন যত সহজে কলমের আঁচড়ে ভারতকে ভাগ করেছিলেন, বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে সবকিছু দুই দেশের মধ্যে ভাগ করা অতটা সোজা ছিল না। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের জন্য তার জল, মাটি, আকাশ ভাগ বাঁটোয়ারা করার সাথে সাথে ভারতের ধন-সম্পদ, লাভ লোকসানও ভাগাভাগি করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে, যা ছিল খুবই জটিল, স্পর্শকাতর এবং দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ বিষয়।

ছয়জনের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয় এই বিষয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য, এবং তাদের পরামর্শ দেওয়ার দায়িত্বভার বর্তায় Reserve Bank of India এর ওপর। এই কমিটি ১৯৪৭ সালের ২৮শে জুলাই তাঁদের রিপোর্ট পেশ করেন, যার মূল সারমর্ম ছিল এই যেঃ


১। পাকিস্তানে নোট ছাপার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকায় ৩১শে মার্চ, ১৯৪৮ ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশেই ভারতীয় মুদ্রা চালু থাকবে এবং তারও ছয় মাস পর পর্যন্ত ভারতীয় মুদ্রা পাকিস্তানে বৈধ থাকবে বলে ঠিক হয়। অন্তর্বর্তী সময়ে পাকিস্তানের জন্য  জন্য মুদ্রা তৈরি করবে Reserve Bank of India।

২। অক্টোবর ১৯৪৮ পর্যন্ত ভারত পাকিস্তান দুই দেশের অর্থনীতির ভালো মন্দ নীতি নির্ধারণ করার পূর্ণ দায়িত্ব থাকবে Reserve Bank of India এর ওপর।



১৯৪৮ সালের ১লা এপ্রিল Reserve Bank of India এবং ভারতীয় সরকার, পাকিস্তান সরকারের জন্য প্রথম নোট ছাপানো শুরু করে, যা শুধুমাত্র পাকিস্তানের মধ্যেই বৈধ থাকবে। এই নোট ছাপানো  হয়েছিল নাসিকের India Security Press থেকে।



নোটগুলি ছিল পুরদস্তুর ভারতীয় নোটের মতই, শুধু নোটের ওপরের দিকে ইংরেজিতে Government of Pakistan এবং নিচে উর্দু ভাষায় হুকুমত-ই-পাকিস্তান ছাপানো হত আলাদা করে। নোটে স্বাক্ষর থাকতো Reserve Bank of India এর গভর্নর এবং ভারতের অর্থমন্ত্রীর।


তখন শুধুমাত্র ১,৫,১০ এবং ১০০ টাকার নোট ছাপানো হত, ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানি নোট ছাপানোর কাজ State Bank of Pakistan এর হাতে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু কেবলমাত্র পাকিস্তানি এক টাকার নোট ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ভারত থেকে ছাপানো হয়ে যেত। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আলাদা হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত পাকিস্তানি নোট ছাপানো হত বাংলা এবং উর্দু- এই দুইটি ভাষায়।



 প্রতিবেদনটি আপনাদের কেমন লাগলো নিচে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করুন। এইরকম প্রতিবেদন আমাদের ব্লগে লেখার জন্যে যোগাযোগ করুন dejogot@gmail.com






Wednesday, October 24, 2018

কেন হল এরকম নামকরন? পাথুরিয়াঘাটা নামকরনের পিছনে কারন কি ছিল?

October 24, 2018 0
কেন হল এরকম নামকরন? পাথুরিয়াঘাটা নামকরনের পিছনে কারন কি ছিল?
আজ পর্যন্ত নানারকম বিষয় নিয়েই আমরা আলোচনা করেছি,চেষ্টা করেছি অজানা তথ্যের সন্ধানকে যতটা সম্ভব বহুমুখী করার। আজ তাই একটু অন্যরকম বিষয় নিয়ে উপস্থিত হয়েছি ।
          আমাদের চারপাশে এমন অনেক জায়গা রয়েছে যার নামকরণের পেছনে লুকিয়ে রয়েছে অনেক না জানা ইতিহাস।অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে আমরা প্রায় রোজ যাওয়াআসা করি ,কিন্তু সেখানকার নামটা ওরকম কেন হল আমরা কি কখনও ভেবে দেখি? এমনকি যেখানে আমরা থাকি সেখানকার নামকরণের কারণ কি আমাদের জানা?
‘বউবাজারে কি বউ পাওয়া যায়? উল্টোডাঙা কি সত্যি ই উল্টো’, সেসব আলোচনা আজকের মতো থাকুক।আজ আমরা যেই জায়গার ইতিহাস নিয়ে জানবো সেটি হল পাথুরেঘাটা বা পাথুরিয়াঘাটা। 




    উত্তর কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী বনেদীপাড়া হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চল। ঢিলছোঁড়া দূরত্বে রয়েছে ঠাকুরবাড়ী ,এছাড়াও উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবার ছিল যেমন ঘোষ পরিবার ,মল্লিক পরিবার। একাধিক বনেদী পরিবারের বাস থাকা সত্ত্বেও ,প্রদীপের তলার অন্ধকারের মতো এখানে গজিয়ে ওঠে পতিতালয় ।কিনতু এই অঞ্চলটি শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় তাদের ব্যবসার পক্ষে মোটেই সুবিধাজনক ছিল না।তাই তাঁরা আবেদন করেন শহরের বাইরে ঘেরাটোপের মধ্যে যেন তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয় ।পতিতা উদ্ধারিনী সভার সভাপতি রাজা নবকৃষ্ণ এই আবেদনে সাড়া দিলেন।কিনতু আপত্তি উঠল এক শ্রেণীর পণ্ডিতদের মধ্যে। তাঁরা আশঙ্কা করলেন পতিতাদের শহরের বাইরে চালান করলে রোগ ছড়াবে সর্বত্র,তার চেয়ে বরং তারা এখন যেভাবে আছে সেরকমই থাক।
পাথুরিয়াঘাটা ঠাকুরবাড়ি

তৎকালীন নগরপাল বিধান দিলেন,পতিতারা পাড়ার মধ্যেই থাকবে,কিনতু ভদ্রবাড়ীর সাথে পতিতাবাড়ির পার্থক্য থাকাটা জরুরী। ঠিক হল পতিত বাড়ির বাইরে থাকবে পাথর ,এতে পায়ের ছাপ পড়বে না।বাকি অন্যান্য বাড়ির সামনে টা থাকবে কাঁচা।সেই থেকে অঞ্চলটার নাম হয়ে গেল পাথুরিয়াঘাটা।



ঠাকুর দুর্গ


ঘোষ বাড়ি

কথিত আছে পৌরাণিক অহল্যা ছিলেন প্রস্তরীভূত, শ্রীরামচন্দ্রের পবিত্র পাদস্পর্শে অহল্যার মুক্তি ঘটে।
পতিতারা অহল্যার পূজা করেন। পতিতাগৃহের বাইরে তাই পাথর থাকা সুলক্ষণ বলে গণ্য করা হত।
জানা যায়, তখনকার দিনে দুর্গাপ্রতিমা তৈরীতে ব্যবহৃত পতিতালয়ের মৃত্তিকা এখান থেকে সরবারহ করা হত।  

 প্রতিবেদনটি আপনাদের কেমন লাগলো নিচে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করুন। এইরকম প্রতিবেদন আমাদের ব্লগে লেখার জন্যে যোগাযোগ করুন dejogot@gmail.com




[ আরও পড়ুন ঃ আন্দামানের ইতিকথা ]

Sunday, August 19, 2018

মৃত্যুর ১২ বছর পর ফিরে এলেন রাজাঃ হাড় হিম করা কাহিনী যা হার মানাবে রূপকথার অলীক গল্পকেও।

August 19, 2018 0
মৃত্যুর ১২ বছর পর ফিরে এলেন রাজাঃ হাড় হিম করা কাহিনী যা হার মানাবে রূপকথার অলীক গল্পকেও।
ছেলেবেলায় যারা দাদু ঠাকুমার কাছে রূপকথার গল্প শুনে বড় হয়েছে তাদের মত ভাগ্যবান মনে হয় এই দুনিয়ায় আর কেউ নেই। কালের নিয়মে এখন অবশ্য সেই চল আর নেই।গল্প দাদুর আসর, ঠাকুমার ঝুলি, টিনটিন অ্যাস্টেরিক্সের জায়গা আজ দখল নিয়েছে মুখবই, হোয়াট্স্যাপের ধুসর দুনিয়া। আজ আমরা সেরকমই হারিয়ে যাওয়া এক গল্প বলব, যা রূপকথার অলীক কল্পনা মনে হলেও কঠোর বাস্তব। আজ আমরা কথা বলব অধুনা বাংলাদেশের অন্তর্গত ভাওয়াল প্রদেশের রাজা রমেন্দ্রনারায়ণকে নিয়ে। যাকে নিয়ে একসময় বাংলা তথা সারা ভারতবর্ষ তোলপাড় হয়ে ওঠে। এমনকি সেই তোলপাড়ের আঁচ গিয়ে পড়ে টেমস নদীর তীরেও। ভাওয়ালের সন্ন্যাসী রাজার এই কাহিনী না শুনলে তা অনুমান করাও অসম্ভব।

আমাদের গল্পের মুখ্য চরিত্র রাজা রমেন্দ্রনারায়ণ ছিলেন রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ ও রানী বিলাসমণির তিন পুত্র সন্তানের মধ্যে মধ্যমজন। রাজেন্দ্র নারায়ণ রাজ্য সামলানো দূরে থাক নিজেকেই ঠিক করে সামলাতে পারতেন না। তাই স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের রাশ ছিল রানী বিলাসমণির হাতে। নিজ সন্তানদের হাজার চেষ্টা করেও ঠিক মতো মানুষ করতে ব্যর্থ হন রানীমা। তিন পুত্র, বিশেষ করে মেজকুমার বেড়ে ওঠেন নিজ পিতার ধাঁচেই। ১৯০২ সালে রমেন্দ্রনারায়ণের বিয়ে হয় অপূর্ব সুন্দরী বিভাবতী দেবীর সাথে। মেজকুমারের উল্লেখযোগ্য কোনো গুণাবলী ছিলনা বললেই চলে, সারাদিন শিকার এবং নারীসঙ্গেই মজে থাকতেন তিনি। ওদিকে রানী বিভাবতী দেবী ধীরে ধীরে তাদের পারিবারিক ডাক্তার আশুতোষ দাসগুপ্তের সাথে অবৈধ সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে পড়েন। ঘটনাচক্রে রানী একসময় সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন যখন রোগভারাক্রান্ত মেজকুমার ছিলেন সন্তানলাভে অক্ষম। এই কথা জানাজানি হতেই রানী পড়েন আতান্তরে।

ইতিমধ্যে রাজার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আশুতোষ ডাক্তার রাজাকে হাওয়া বদলের পরামর্শ দেন। অতঃপর ১৯০৯ সালে এপ্রিলের মাঝামাঝি দার্জিলিং - এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন মেজকুমার, সঙ্গী হলেন রানী, রানীর ভাই সত্যেন্দ্রনাথ, ডাক্তার আশুতোষ এবং ব্যাক্তিগত কর্মচারী মিলিয়ে ২৭জন।

দার্জিলিং যাওয়ার দিন পনেরো আগে একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার শিকার করার পর বাঘটির সাথে ছবি তোলেন মেজকুমার। " টাইগার ফটো" নামে পরিচিত এই ছবিটি রাজা হিসাবে মেজকুমারের শেষ ছবি যা উনবিংশ শতাব্দীর একটি অন্যতম ছবি হিসাবে বাংলাদেশ আর্কাইভ প্রদর্শনীতে স্থান পায়।

টাইগার ফটো


হাওয়া বদলে যাওয়ার পর থেকে রাজার শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে, কারন রানী, রানীর ভাই এবং ডাক্তার আশুতোষ- তিনজন মিলে চক্রান্ত করে ক্রমাগত বিষ প্রয়োগ করতে থাকেন মেজকুমারকে। অবশেষে ৮ই মে সন্ধ্যা ৭ টা থেকে ৮টার মধ্যে রাজার মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হয়। দার্জিলিং এর শ্মশানে তড়িঘড়ি শেষকৃত্য সম্পন্ন করে ১০ই মে মেজরানী ও বাকিরা ফিরে আসেন। ১৮ই মে মেজকুমারের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান পালন করা হয়।

আর পাঁচটা কাহিনীর মত এটাও এখানেই শেষ হতে পারত, কিন্তু ইতিহাস কখনই অন্যায়কে লালন করেনা। পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কেউ রেহাই পায়নি ইতিহাসের নির্মমতার হাত থেকে।

[ আরও পড়ুন ঃ আন্দামানের ইতিকথা ]

[ আরও পড়ুন ঃ প্রত্যাখ্যাত শাহেনশাহ্]

আরও পড়ুন ঃ একটু দেরী, পন্ডিচেরী।]

[ আরও পড়ুন ঃ জানা অজানা রবীন্দ্রনাথ। ]

এই ঘটনার ঠিক ১২ বছর পর, ১৯২১ সালের মে মাসে ঢাকায় হঠাৎ আত্মপ্রকাশ ঘটে এক সন্ন্যাসীর, দেখতে অবিকল মেজকুমারের মত। খবর পাঁচকান হতে বেশি সময় লাগলো না, দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ল জয়দেবপুর এবং কাশিমপুরের জমিদার বাড়িতে। খবর পেয়ে সন্ন্যাসীর সাথে দেখা করেন মেজকুমারের বোন জ্যোতির্ময়ী দেবী। প্রথম দর্শনেই জ্যোতির্ময়ী দেবীর চোখ আটকে যায়। তিনি লক্ষ্য করেন যে তাঁর ভাইয়ের মত সন্ন্যাসীরও খাওয়ার সময় ডান হাতের তর্জনী আলগা হয়ে যায় এবং জিহ্বা বেরিয়ে আসে। পরিচয় প্রমানের সমস্ত পরীক্ষায় সন্ন্যাসী সহজেই উতরে যান। রাজবাড়ির খুঁটিনাটি, সদস্যদের সম্পর্কিত নানা ঘটনা, আস্তাবলে কটা ঘোড়া ছিল, হাতিশালে কটা হাতি ছিল, কতজন চাকর কর্মচারী ছিল সব গড়গড় করে বলে যেতে থাকেন।

পরীক্ষায় যত সহজেই পাস করে যান না কেন, রানী বিভাবতী দেবী এবং তাঁর ভাই সত্যেন্দ্রনাথ এর পক্ষে সন্ন্যাসীকে মেজকুমার হিসাবে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। কারন ততদিনে ক্ষমতায় আসীন রানী বিয়ে করেছেন ডাক্তার আশুতোষকে এবং রাজার বিমা ও জমিদারী থেকে প্রাপ্ত লক্ষ্যাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছেন রানীর ভাই। প্রায় এক যুগ পর মৃত রাজা দৃশ্যপটে হাজির হতে শুরু হল রাজত্ব দখল করে বসা সুবিধাভোগীদের জটিল চক্রান্ত। সন্ন্যাসীকে প্রতারক প্রমান করতে কোমর বেঁধে লেগে পড়েন তারা। রাজপরিবার শুধু নয়, রাষ্ট্রযন্ত্র এমনকি সাধারন প্রজামহলও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন।

সন্ন্যাসীর মুখ থেকেই জানা যায় আশুতোষ ডাক্তারের দেওয়া বিষের ক্রিয়ায় ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়া মেজকুমার হঠাৎ  অচেতন হয়ে পড়লে তৎক্ষণাৎ তাঁরা রাজাকে মৃত ঘোষণা করে সৎকার করার ব্যবস্থা করেন। পথে প্রবল ঝড় বৃষ্টি এলে, রাজাকে পথেই ফেলে রেখে বাকিরা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। সেই সময় সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন কিছু নাগা সন্ন্যাসী। তাঁরা এইভাবে একজনকে অচেতন অবস্থায় রাস্তার মাঝে পড়ে থাকতে দেখে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। রানীর লোকেরা ঝড় শেষে ফিরে এসে দেখেন যে রাজা সেখানে নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর অগত্যা তাঁরা ফিরে আসেন। ওদিকে নাগা সন্ন্যাসীদের সেবায় রাজা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন, কিন্তু সাময়িকভাবে তাঁর স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। সন্ন্যাসধর্মে দীক্ষিত রাজা এরপর নানা জায়গা ঘুরে বেড়ানোর পর বাংলাদেশে এসে তাঁর স্মৃতি ফিরে পান। এরপর তিনি নিজের রাজত্বে প্রত্যাবর্তন করেন সত্যকে সবার সামনে নিয়ে আসার জন্য।

প্রত্যাবর্তনের পর সন্ন্যাসী রাজা


সত্য উদ্ঘাটনের দায়িত্ব ন্যস্ত হয় আদালতের ওপর। দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর বাদী বিবাদী উভয় উভয়পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহন চলে। সমস্ত সাক্ষ্য প্রমান বিচার করার পর বিচারক পান্নালাল বসু ১৯৩৬ সালের ২৪শে আগস্ট সন্ন্যাসী রাজার পক্ষে ৫৩২ পাতার রায় দেন। উভয়পক্ষের হয়ে সাক্ষ্য দেন ১৫৪৮ জন। তৎকালীন বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে দীর্ঘতম নজিরবিহীন এই মামলা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, যে মামলা "ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলা" নামে পৃথিবী বিখ্যাত।

বিবাদিপক্ষ্য এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। ১৯৪০ সালের ২৯শে আগস্ট বিচারপতি আগের রায়ই বহাল রাখেন। এরপর আপিল করেন লন্ডনের প্রিভি কাউন্সিলে। ১৯৪৬ সালের ৩০শে জুলাই প্রিভি কাউন্সিলও সন্ন্যাসী রাজার পক্ষেই রায় দেন। এর ঠিক তিনদিন পরেই রাজা মারা যান, যেন সত্য প্রতিষ্ঠার অপেক্ষাতেই ছিলেন তিনি।

ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলা এতই প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল যে, ভারতবর্ষের বিখ্যাত মামলাগুলির মধ্যে এটি দিল্লিতে গত শতাব্দীর আলোড়ন সৃষ্টিকারী অন্যতম শ্রেষ্ঠ মামলা হিসাবে স্থান পেয়েছিল। এই মামলা নিয়ে প্রচুর লেখালিখি হয় দেশে বিদেশে, অজস্র নাটক যাত্রা পালা রচিত হয় এই কাহিনী নিয়ে। উত্তম কুমার অভিনীত 'সন্ন্যাসী রাজা' সিনেমাটি এই কাহিনী থেকেই অনুপ্রানিত।

সন্ন্যাসী রাজা সিনেমায় উত্তম কুমার 


৩৬০ কক্ষ্যবিশিষ্ট সেই ভাওয়াল রাজবাড়ি আজ গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু এর ঠিক উল্টোদিকে থাকা আশু ডাক্তারের বাড়িটি রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে ধুলিস্মাত হয়ে যেতে বসেছে।

ভাওয়াল রাজবাড়ি
 প্রতিবেদনটি আপনাদের কেমন লাগলো নিচে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করুন। পরবর্তী পোষ্টের নোটিফিকেশান পেতে ব্লগটি ফলো অপশনে ক্লিক করুন।

[ আরও পড়ুন ঃ'লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন'- কে এই গৌরী সেন?]

[ আরও পড়ুন ঃ'দাদা সাহেব ফালকে' পুরস্কার পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। কেন জানেন? ]

[আরও পড়ুন ঃ ট্রেন-এ শৌচালয় অন্তর্ভুক্তির পিছনে অবদান কার জানেন? ]

[আরও পড়ুন ঃ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আগে এখানে ছিল একটি জেলখানা। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য। ]

Sunday, July 15, 2018

স্টোনম্যান সিরিয়াল কিলার : যে কখনো ধরা পড়েনি !

July 15, 2018 0
স্টোনম্যান সিরিয়াল কিলার : যে কখনো ধরা পড়েনি !

অনেক রাত করে আপনি হয়তো বাড়ি ফিরছেন ফাঁকা রাস্তা দিয়ে খোশ মেজাজে । কিন্তু এর মেয়াদ হতে পারে খুবই অল্প । আপনার আসে পাশেই হয়তো ওঁত পেতে আছে এক রহস্যজনক আততায়ী ! এবং তার পরবর্তী শিকারটি হয়তো আপনিই । কিছু বুঝে ওঠবার আগেই আপনার উপরে এসে পড়তে পারে একটি বড় পাথর আর আপনি নিমেষে চোখে অন্ধকার দেখবেন।

.
.
কি ? ঢোঁক গিলছেন বুঝি ? ভয় তো লাগারই কথা । কিন্তু জানেন কি এইরকম ঘটনা স্বয়ং কলকাতা'র বুকে ঘটে গেছে ? রাতের পর রাত পুলিশ প্রশাসনের চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলো এই রহস্যজনক আততায়ী ।  কিন্তু  কি এই রহস্য এবং কে এই স্টোনম্যান  আর কেনই বা এই রহস্যের সমাধান আজও হতে পারেনি ? মনের প্রশ্ন চিহ্ন গুলি মিটিয়ে ফেলতে পড়ে ফেলুন এই নিবেদনটি।




ঘটনার সূত্রপাত ঘটে গত শতাব্দীর শেষ দশকের দিকে অর্থাৎ ১৯৮৫ সালে ।  পথচারীদের মনে ভয় জাগানোর মত ঘটনা ঘটলো সবার অখেয়ালে । বিন্দুমাত্র খোঁজ নেই কারুর কাছেই অথচ একটার পর একটা রহস্যজনক মৃত্যুর  ঘটনা কানে আসতে লাগলো  মুম্বাই পুলিশের। পর পর ১২ জনের মৃত্যু হয় । প্রত্যেক দিন ভোরবেলা পাওয়া যাচ্ছিল থেতলানো মাথার অসাড় শরীর । বিষয়টি প্রচণ্ড ভাবে নাড়া দেয় মুম্বাই পুলিশের বড় কর্তাদের । মোতায়েন করা হয় পুলিশবাহিনী । সাধারন মানুষ ঘর থেকে বেরনো বন্ধ করে দেয় রাত ১০ টার পর । ঘটনার তদন্ত করে কিছু আশ্চর্য জিনিস পুলিশের নজরে আসে । সেগুলি হল-----


  1. প্রত্যেকটি মৃত্যু ঘটে গভীর রাত্রে যখন সবাই ঘুমের ঘোরে আচ্ছন্ন । 
  2. সবাইকে মারার ক্ষেত্রে যে অস্ত্রটি ব্যবহার করা হয় তা হল আস্ত একটি ৩০ কেজির পাথর ! আর তাতে করেই আঘাত হানা হয় ।
  3. আর যাদের মৃত্যু ঘটে তারা সকলেই ফুটপাথবাসি ।


    তবে এই ঘটনার পেছনে কে বা কাদের হাত ছিল তার কিনারা আর হয়ে ওঠেনি । ধরা পড়েনি সিরিয়াল  কিলারটি । বিষয়টি সময়ের সাথে সাথে মানুষজন ভুলে যায় এবং মুম্বাইয়ের জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে আসে ।


    কিন্তু ঘটনার শেষ এখানেই নয় । যেন ফিল্মি ভাষায় "পিকচার আভি বাকি হ্যাঁয়"।

    টার্গেট এবার কিন্তু খোদ আমাদের কোলকাতা । মুম্বাই ঘটনার রেষ কাটতে না কাটতেই ঠিক বছর চারেক পর ১৯৮৯ তে কানে এল মানুষ মরার ঘটনা । এবার তাঁর শিকার রাস্তার মানুষ, অসহায় ভিখারি,পাগল এবং রিক্সা চালক যারা এই শহরের আবর্জনাকে মাথায় বিছানা বানিয়ে ঘুমতো । যেমন লন্ডনের জ্যাক দ্যা রিপার, বোস্টন শহরের কুখ্যাত শ্বাসরোধকারী খুনি তেমনই ৩০০ বছরের ঐতিহ্যশালী কোলকাতাতেও এবার যেন এসে পড়েছিল রহস্যজনক স্টোনম্যানের ছায়া । যার ভয় সবাইকে দিনে দুপুরেও তাড়া করে বেড়াচ্ছিল। রাস্তায় সমান ভাবে পাওয়া যেতে লাগলো মৃতদেহ । তবে এবার এ ১২ টি নয় পাওয়া গেল ১৩ টি মৃতদেহ। স্টোনম্যানের প্রথম শিকার হয় রাস্তার ধারে দেশি মদ বিক্রি করে জীবন চালানো এক মহিলা । দ্বিতীয় শিকার হয় পথভ্রষ্ট এক ভিখারি কিন্তু  সবথেকে আশ্চর্য বিষয় হলো ইনি মারা যান প্রথম মৃত্যুর ঠিক একমাস পর । ঘড়ির কাঁটাতে যেন নিয়ম করে ঠিক করে দেওয়া ছিল একদম একমাস পরেই পরবর্তী শিকার করা হবে । 

    পদ্ধতি এবারেও এক । মাথায় আঘাতের চিহ্ন,দেহের পাশে সেই রক্তাক্ত বড় পাথর ।  

    তদন্তে নামে কোলকাতা পুলিশ । এতে পুলিশ অনুমান করে আততায়ীর উচ্চতা কম করে ৬.২ ইঞ্চি । সন্দেহভাজন কয়েকজন ব্যক্তিকে তুলে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় । কিন্তু এক্ষেত্রেও কোনো কূলকিনারা খুঁজে পায়নি তৎকালীন লালবাজারের বড়কর্তারা । বুঝে উঠতে পারেনি আততায়ী ঘটনাটি একাই ঘটিয়েছে নাকি দল বেঁধে । যদিও শোনা যায় নাকি এক উন্মাদকে ধরে এনে কোলকাতা পুলিশ তাকে স্টোনম্যানের আখ্যা দেয় । 

    সম্প্রতি সৃজিত মুখার্জি পরিচালিত বাংলা ছায়াছবি "২২ শে শ্রাবণ" এইরকমই ঘটনার উপর চিত্রিত ।   
    এছাড়াও "দ্যা স্টোনম্যান মার্ডারস" নামের হিন্দি সিনেমাটি সম্পূর্ণভাবে এই সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করেই । 

    সিরিয়াল কিলার স্টোনম্যান রহস্য শেষমেশ একটা মিসট্রি হয়েই রয়ে গেছে । আর এই অসমাধিত রহস্য কিন্তু তৎকালীন পুলিশ এবং প্রশাসনের ব্যর্থতাকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দেয় । 

    --------------------------------------------------------------------------------------------------

    এই প্রতিবেদনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই নীচে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না । আর অবশ্যই সকলের সাথে শেয়ার করে জানার আনন্দকে দ্বিগুণ করে তুলুন ।


    [ আরও পড়ুনঃ বিধান চন্দ্র রায় মাত্র এক টাকায় কিনেছিলেন আজকের সল্টলেক। সল্টলেক সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য। ]


    [ আরও পড়ুন ঃ জানা অজানা রবীন্দ্রনাথ। ]

    [ আরও পড়ুন ঃ'দাদা সাহেব ফালকে' পুরস্কার পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। কেন জানেন? ]



    [আরও পড়ুন ঃ ট্রেন-এ শৌচালয় অন্তর্ভুক্তির পিছনে অবদান কার জানেন? ]






    Saturday, July 7, 2018

    ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আগে এখানে ছিল একটি জেলখানা। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য।

    July 07, 2018 0
    ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আগে এখানে ছিল একটি জেলখানা। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য।
    পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী তথা বাণিজ্য নগরী কলকাতার কথা বললে যে কয়েকটি স্থাপত্য ভাস্কর্যের কথা মাথায় আসে, তার মধ্যে প্রথম নামটি অবধারিত ভাবে হয় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল বা হাওড়া ব্রীজ। আজকের আমাদের এই প্রতিবেদনটি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এই স্মৃতিসৌধটি রানী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিরক্ষার্থে তৈরি তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু এর পিছনেও লুকিয়ে রয়েছে অনেক না জানা ইতিবৃত্ত যা এই প্রতিবেদনের উপজীব্য। 



       যদি বলি, বর্তমানে যেখানে রানী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিসৌধটি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে কয়েক দশক আগেও ছিল দাগী আসামীদের কারাগার তাহলে কি খুব অবাক হবেন? অবাক হলেও এটাই বাস্তব!

       ১৭৬৭ সালে কলকাতায় দুটি মাত্র জেলখানা ছিল, একটি ছিল লালবাজারে এবং অপরটি বড়বাজারে। একটি ছিল Petty Crime বা লঘু অপরাধের জন্য, অপরটি Serious Crime বা ঘৃণ্য অপরাধের জন্য। তখন ইংরেজ শাসকরা যে হারে যথেচ্ছ ধরপাকড় করতেন তাতে জেলের জায়গা সংকুলান হয়ে পড়ায় ১৭৭৮ সালে প্রেসিডেন্সি জেল তৈরি করা হয় ঠিক সেখানে, যেখানে এখন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। স্থানীয় লোকেদের কাছে এই জায়গাটি 'হরিণবাড়ি' নামে পরিচিত ছিল। কথিত আছে এখানে নাকি নবাব সিরাজ-উদ্-দৌল্লা হরিণ শিকার করতে আসতেন। এই জেলটি উচ্চ শ্রেণীর কয়েদিদের জন্য ব্যবহার করা হত। এমনকি এই জেলে কয়েদিদের সাথে তাদের বাড়ির লোকের থাকারও বন্দোবস্ত ছিল। এই জেলের অন্যতম উল্লেখযোগ্য একজন কয়েদি ছিলেন 'বেঙ্গল গেজেট' পত্রিকার জনক জেমস অগাস্টাস হিকি। পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্সি জেল ১৯০৬ সালে আলিপুরে স্থানান্তরিত করা হয় এবং প্রেসিডেন্সি জেল ভেঙে রানীর স্মৃতিসৌধকে জায়গা ছেড়ে দেওয়া হয়। 

    [ আরও পড়ুন ঃ আন্দামানের ইতিকথা ]

    [ আরও পড়ুন ঃ প্রত্যাখ্যাত শাহেনশাহ্]

    আরও পড়ুন ঃ একটু দেরী, পন্ডিচেরী।]

    [ আরও পড়ুন ঃ জানা অজানা রবীন্দ্রনাথ। ]

        ১৯০৬ সালে ওয়েলস এর রাজকুমার এই স্মৃতি সৌধের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯০১ সালে রানীর অন্তর্ধানের পর ঠিক হয় সারা ভারত জুড়ে রানীর স্মৃতি রক্ষার্থে ছোট ছোট সৌধ নির্মাণ করা হবে। কিন্তু তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন স্থির করেন কলকাতার বুকে একটি সুবিশাল স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করবেন যা হার মানাবে তাজমহলের ঔজ্জ্বল্য আর স্থাপত্যশৈলীকে।



       যেমন ভাবা তেমন কাজ। স্থাপত্য কাজের দায়িত্ব বর্তায় ' Royal Institute of British Architect' এর সভাপতি উইলিয়াম এমারসন এর ওপর এবং নির্মাণ কাজের দায়িত্ব ন্যস্ত হয় কলকাতা ভিত্তিক কোম্পানি ' মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানি' এর ওপর। সুদূর রাজস্থান থেকে ২০০,০০০ ঘনফুট মাক্রানা মার্বেল নিয়ে আসা হয়, যেই মার্বেল ব্যবহার করা হয়েছিল তাজমহল তৈরিতে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল যে সৌধটি তৈরিতে প্রয়োজন প্রায় ৭৬ লাখ টাকা তোলা হয়েছিল ভারতের সাধারন জনগনের পকেট থেকে। এর থেকেই ছবিটা স্পষ্ট যে সেই সময় ইংরেজরা কিভাবে ভারতের সাধারন মানুষদের লুঠ করেছিলেন।


        ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর বিভিন্ন ইংরেজ প্রশাসকদের মূর্তি সরিয়ে সেই স্থানে ভারতীয় বিখ্যাত ব্যক্তিদের মূর্তি বসানোর কাজ শুরু হয়। সরিয়ে ফেলা সেই সব মূর্তির বেশিরভাগ স্থান পায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বাগানে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জেমস আউটরামের মূর্তি, যেটি পূর্বে পার্কস্ট্রীট ও চৌরঙ্গী ক্রসিং-এ শোভা পেত। ১৯৫৮ সালে সেই জায়গায় স্থান পায় মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি। 


    প্রতিবেদনটি আপনাদের কেমন লাগলো নিচে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করুন। পরবর্তী পোষ্টের নোটিফিকেশান পেতে ব্লগটি ফলো অপশনে ক্লিক করুন।

    [ আরও পড়ুন ঃ'লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন'- কে এই গৌরী সেন?]

    [ আরও পড়ুন ঃ'দাদা সাহেব ফালকে' পুরস্কার পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। কেন জানেন? ]

    [আরও পড়ুন ঃ ট্রেন-এ শৌচালয় অন্তর্ভুক্তির পিছনে অবদান কার জানেন? ]


    Sunday, June 24, 2018

    পৃথিবীর একমাত্র ভাসমান পোস্ট অফিসটি কোথায় অবস্থিত জানেন? জানলে অবাক হবেন।

    June 24, 2018 0
    পৃথিবীর একমাত্র ভাসমান পোস্ট অফিসটি কোথায় অবস্থিত জানেন? জানলে অবাক হবেন।
    বিশ্বের বৃহত্তম ডাক নেটওয়ার্ক-এর কৃতিত্ব যে ভারতের হস্তগত, সেই কথা কমবেশি আমাদের সকলেরই জানা। ১৭৭৪ সালে ডাক পরিষেবার গড়াপত্তনের দিন থেকে আজ পর্যন্ত ভারতে প্রায় ১,৫৫,০১৫ টি পোস্ট অফিস গড়ে উঠেছে। এক একটি পোস্ট অফিস গড়ে প্রায় ৭১৭৫ জন মানুষকে ডাক সেবা প্রদান করে থাকে।

      আগেকার দিনের মত চিঠি লেখালিখির প্রচলন না থাকলেও, অন্যান্য নানা পরিষেবার জন্য আজও ভারতীয় ডাক ব্যবস্থার গুরুত্ব অক্ষুন্ন রয়ে গেছে। বহু প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে আজও ব্যাঙ্কিং পরিষেবার একমাত্র বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান হল ভারতীয় ডাক বিভাগ। ছোট বড় অনেক রকম পোস্ট অফিস আমরা দেখেছি, কিন্তু বিশ্বের একমাত্র ভাসমান পোস্ট অফিস যে আমাদের ভারতবর্ষে অবস্থিত তা কি আপনারা জানতেন?

    [ আরও পড়ুন ঃ কিভাবে মেদিনীপুরকে পিছনে ফেলে রেলশহর হিসাবে গড়ে উঠলো খড়্গপুর। খড়্গপুরকে নিয়ে কিছু জানা অজানা তথ্য। ]

    [ আরও পড়ুন ঃ জানেন কি রসগোল্লার কলম্বাস কাকে বলা হয় ? ]

    ভারত তথা পৃথিবীর একমাত্র ভাসমান পোস্ট অফিসটি অবস্থিত ভারতের ভূস্বর্গ কাশ্মীরের ডাল লেকে। নৈঃস্বর্গিক সৌন্দর্যের কারনে কাশ্মীর ভ্রমনপ্রিয় মানুষদের কাছে একটি লোভনীয় গন্তব্যস্থল। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত ডাল লেকের ওপর ভাসমান পোস্ট অফিসটি  এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা এবং আগত পর্যটকদের ডাক সেবা প্রদান করার সাথে সাথে দর্শনীয় স্থান ও হয়ে উঠেছে। বোটের ওপর বানানো দুই কামরার এই পোস্ট অফিসে ফিলাটেলি মিউজিয়ামও আছে, যেখানে বহু পুরানো ও আকর্ষণীয় পোস্টাল স্ট্যাম্প আছে। এই পোস্ট অফিস এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল যে এখানকার সমস্ত পোস্টকার্ডে ডাল লেক ও শ্রীনগরের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের সুন্দর সুন্দর ছবি দেওয়া থাকে। অন্যান্য সাধারন ডাক সেবা প্রদান করার পাশাপাশি এই পোস্ট অফিস টেলিফোন এবং ইমেইল করার সুবিধাও প্রদান করে থাকে। 




      এটি আসলে একটি হেরিটেজ পোস্ট অফিস যেটি ব্রিটিশ আমল থেকেই ছিল। আগে এটি নেহেরু পার্ক পোস্ট অফিস নামে পরিচিত ছিল। পরে এর সংস্কার করে ২০১১ সালে তৎকালীন জম্মু কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা নতুন পোস্ট অফিস এর সূচনা করেন এবং তখন থেকে এটি "FLOATING POST OFFICE" নামে পরিচিত। 




    এই প্রতিবেদনটি আপনাদের কেমন লাগলো নিচে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করুন।

    [ আরও পড়ুনঃ বিধান চন্দ্র রায় মাত্র এক টাকায় কিনেছিলেন আজকের সল্টলেক। সল্টলেক সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য। ]

    [ আরও পড়ুন ঃ জানা অজানা রবীন্দ্রনাথ। ]

    [ আরও পড়ুন ঃ'দাদা সাহেব ফালকে' পুরস্কার পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। কেন জানেন? ]


    [আরও পড়ুন ঃ ট্রেন-এ শৌচালয় অন্তর্ভুক্তির পিছনে অবদান কার জানেন? ]

    Sunday, June 10, 2018

    জানেন কি রসগোল্লার কলম্বাস কাকে বলা হয় ?

    June 10, 2018 0
    জানেন কি রসগোল্লার কলম্বাস কাকে বলা হয় ?
    ভাত মাছ ছাড়াও  যদি বাঙালীদের কোনো কিছু দিয়ে বর্ণনা করা যায় তা হল রসগোল্লা । কিন্তু জানেন কি কিভাবে এর উৎপত্তি ? আর সুস্বাদু এই নরম ছানার মিষ্টি তৈরির পেছনে কার অবদান আছে ? এবং যিনি এই মিষ্টিকে জগৎজোড়া খ্যাতি এনে দিয়েছিলেন কেনই বা তাঁকে "রসগোল্লা'র কলম্বাস" উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে ? তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক ।


    ছানার তৈরী রসগোল্লা 

    বাঙালীদের সাথে ইতিহাস বরাবরই ওতপ্রোতভাবে জড়িত । তাই এই রসগোল্লা তৈরির পেছনেও যে একটা রসালো ইতিহাস জড়িয়ে আছে তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে !


    বলা হয় যে ১৪৯৮ সালেভাস্কো দা গামা  ভারতে পদার্পণ করার পর থেকেই
    পর্তুগীজ ব্যবসায়ীদের সাথে বাঙালি ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক বেড়ে ওঠে। এদিকে পর্তুগীজদের পনির খুব পছন্দের খাবারগুলোর মধ্যে একটি ছিল। বাঙালি ব্যবসায়ীরা ক্রমে ক্রমে তা জানতে পারে এবং ছানা তৈরী করতে শেখে । ছানার চাহিদা বাড়তে থাকায় দুধ কেটে ছানা তৈরী যেন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে উঠলো ।

    ভোজনরসিক বাঙালীদের নতুন খাবারের প্রতি আকর্ষণ আজন্মের। এই ছানা তৈরির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই ১৮৬৬ নবীন চন্দ্র দাশ নামের এক ময়রা বানিয়ে বসলেন এক আশ্চর্য মিষ্টির ! কথা ছিল গোল্লা বানানোর কিন্তু আমাদের নবীন বাবু গোল্লা বানাতে এতটাই মগ্ন ছিলেন যে এক খেয়ালে গোল্লা হাত থেকে ফস্কে গিয়ে পড়লো রসে,আর এই থেকেই সৃষ্টি হয় নরম তুলতুলে আর রস সমন্বয়ে এ যেন এক আশ্চর্য ব্যাঞ্জন,যা বাঙালির তথা ভারতবর্ষের মিষ্টির ইতিহাসে একদমই নতুন মোড় সৃষ্টি করে ।


    কিন্তু নবীন চন্দ্র দাশ এর এখনো "রসগোল্লা'র কলম্বাস" হয়ে ওঠা বাকি ছিল। মিষ্টি আবিষ্কার করে ফেললেও এখনো অব্দি কমসংখ্যক গ্রাহকই জানতেন এই নতুন তৈরী মিষ্টির কথা । কিন্তু সুদিনের আসা ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র ।


    নবীন চন্দ্র  দাশ 

    একদিন হঠাৎ বাংলার এক স্বনামধন্য মাড়ওয়ারী জৈনিক ব্যবসায়ী ভগবানদাস বগলা ছেলে পুলেদের সাথে উঠলেন নবীন ময়রার দোকানে মিষ্টির স্বাদ নিতে। ব্যস আমাদের নবীন ময়রা খাওয়ালেন তার আশ্চর্য মিঠাই । গলাধঃকরণ করতে না করতেই তিনি বুঝতে পারলেন এই মিষ্টির কি মহিমা । এই ভগবানদাস বগলা মহাশয়ই পরবর্তীকালে একের পর এক বড় বড় মাপের অর্ডার দিয়ে রসগোল্লা আনতে লাগলেন নবীন ময়রার দোকান থেকে এবং আত্মীয় পরিজনের মধ্যে নবীন বাবুর মিষ্টির সুনাম করতে লাগলেন । ক্রমে ক্রমে রসগোল্লার আবিস্কারকর্তা হিসেবে দেশে বিদেশে নবীন চন্দ্র দাশ বিখ্যাত হয়ে উঠলেন । আর এই ভাবেই আবির্ভাব ঘটলো আমাদের "রসগোল্লা'র কলম্বাসের"



    বিঃদ্রঃ-রসগোল্লা সম্পর্কে যখন এত কিছু জানলেনই তখন একটা বিষয়ে অবশ্যই আপনাদেরকে ওয়াকিবহাল করাটা জরুরী । আপনারা হয়তো নিশ্চয়ই জানেন সম্প্রতি বেশ কিছুদিন আগে অবধি রসগোল্লা কার এই নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয় । এই বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকার GEOGRAPHICAL INDICATIONS REGISTRY ডিপার্টমেন্টকে অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয় । বাংলা ও ওড়িশার ইতিহাসবিদরা উঠে পড়ে লেগে যান আসলে রসগোল্লা তৈরির পেছনে কাদের অবদান সব থেকে বেশি । এমনকি ওড়িশাবাসী লেগে পড়েন ''রাসগুল্লা দিবস'' পালন করার জন্য । কিন্তু দীর্ঘ ২ বছর পর সার্ভে রিপোর্ট বেরিয়ে এলে পরে জানা যায় যে রসগোল্লা (ROSOGOLLA/ROSSOGOLLA) আসলেই বাংলা শব্দ । আর আমরা রসগোল্লাকে নিয়ে গর্ব করি আসলে তা আমাদেরই দান মিষ্টির ইতিহাসে । ওড়িশাবাসী যে রসগোল্লাকে নিয়ে মাতামাতি করছিল আসলে তার নাম 'পাহালা রাসগুল্লা' । তাই সর্বশেষে বাঙালির রসগোল্লা বাঙালীদেরই রইল কিন্তু এবার তার সাথে সরকারি অনুমোদনও রইল ।



    এই প্রতিবেদনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই নীচে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না । আর অবশ্যই সকলের সাথে শেয়ার করে জানার আনন্দকে দ্বিগুণ করে তুলুন ।



    [ আরও পড়ুনঃ বিধান চন্দ্র রায় মাত্র এক টাকায় কিনেছিলেন আজকের সল্টলেক। সল্টলেক সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য। ]


    [ আরও পড়ুন ঃ জানা অজানা রবীন্দ্রনাথ। ]

    [ আরও পড়ুন ঃ'দাদা সাহেব ফালকে' পুরস্কার পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। কেন জানেন? ]


    [আরও পড়ুন ঃ ট্রেন-এ শৌচালয় অন্তর্ভুক্তির পিছনে অবদান কার জানেন? ]

    Friday, June 8, 2018

    কিভাবে মেদিনীপুরকে পিছনে ফেলে রেলশহর হিসাবে গড়ে উঠলো খড়্গপুর। খড়্গপুরকে নিয়ে কিছু জানা অজানা তথ্য।

    June 08, 2018 8
    কিভাবে মেদিনীপুরকে পিছনে ফেলে রেলশহর হিসাবে গড়ে উঠলো খড়্গপুর। খড়্গপুরকে নিয়ে কিছু জানা অজানা তথ্য।
    পৃথিবীর দীর্ঘতম রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম হিসাবে খড়্গপুরের নাম একসময় বেশ পরিচিত ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই রেকর্ডের তকমাও চলে গেছে অন্য ষ্টেশনের নামের পাশে। তা সত্ত্বেও খড়্গপুরের গুরুত্বে এতটুকু ভাঁটা পড়েনি।





      দক্ষিণ পূর্ব রেলের খড়্গপুর সাবডিভিশনের অন্তর্গত খড়্গপুর ষ্টেশনটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত। ১০ প্ল্যাটফর্ম বিশিষ্ট এই ষ্টেশনের ওপর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৭৫টি ট্রেন যাওয়া আসা করে। রেলের দক্ষিণ পূর্ব শাখায় এই ষ্টেশনের গুরুত্ব বিবেচনা করে একে  ' GATEWAY OF SOUTH EASTERN RAILWAY' আখ্যা দেওয়া হয়। বলাবাহুল্য, রেল মানচিত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় স্থান করে নেওয়া রেলশহর খড়্গপুরের ছায়ায় মেদিনীপুর ষ্টেশনটি একপ্রকার দুয়োরানী হয়ে রয়ে গেছে। কিন্তু ইতিহাস মতে পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে হওয়ার কথা ছিল ঠিক উল্টোটা। অর্থাৎ খড়্গপুরের বদলে রেলশহর হিসাবে নিজেকে মেলে ধরার কথা ছিল মেদিনীপুরের। খড়্গপুর কিভাবে মেদিনীপুরকে পিছনে ফেলে রেলশহর হিসাবে পরিচিতি লাভ করল, আসুন জেনে নেওয়া যাক। 




    ব্রিটিশ শাসকেরা তৎকালীন বোম্বাই নগরীর সাথে কলকাতাকে রেলপথে যুক্ত করতে চাইলেন। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল মেদিনীপুর হবে জংশন ষ্টেশন। কিন্তু বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে কোম্পানির (B.N.R.) আধিকারিকরা হিসেব করে দেখেন যে মেদিনীপুরের বদলে খড়্গপুরে জংশন ষ্টেশন বানালে লাভ বেশি। খড়্গপুরের পাথুরে জমিতে ঘরবাড়ি বানানোর খরচ কম হবে, কাঁসাই নদীর ওপর ডবল লাইনের সেতু তৈরির খরচও বেঁচে যাবে। তাছাড়া ঘন জঙ্গলে পূর্ণ খড়্গপুরের গাছ থেকে পাওয়া কাঠও কাজে লেগে যাবে রেল লাইন পাতার কাজে, এবং ঘরবাড়ি তৈরির কাজেও লাগবে। আজকের খড়্গপুরকে দেখে  এর জঙ্গুলে অতীত অনুধাবন করা মোটেই সহজসাধ্য কাজ নয়। এমনকি উনিশ শতকের শেষের দিকেও খড়্গপুর ছিল ঘন জঙ্গলে ভরা।
    ১৯০১ সালে তৈরি হল জংশন ষ্টেশন। তখনও সেখানকার জনবসতি মেরেকেটে সাড়ে তিন হাজার জনের। এখন তো সেই খড়্গপুর মিনি ইন্ডিয়া তে পরিনত হয়েছে।




    ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে যখন প্রথম রেল ইঞ্জিন এসে পৌঁছালো  খড়্গপুরে, ভয়ে সবাই এদিক সেদিক ছুটে পালালো। এই ভয় বহুদিন পর্যন্ত ছিল। গাঁয়ে গাঁয়ে লোক পাঠানো হল ভয় ভাঙানোর জন্য। এমনকি বিনা পয়সাতেও চাপার সুযোগ দেওয়া হত। রেলের সাহেবদেরও আদি বাসিন্দারা ভালোভাবে নেননি। রেলের জন্য অনেকে ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছিলেন, জঙ্গলের অধিকার হারিয়েছিলেন। অনেকে আবার রেলগাড়িতে চড়তে চাইতেন না সেতু ভেঙে নদীতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে, অনেকে চড়তেন না একই কামরায় সবার সাথে যাত্রা করে জাত যাওয়ার ভয়ে।




    ১৯১১ সালের মধ্যে খড়্গপুর পুরোদস্তুর রেলশহর হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। পরে একে একে গড়ে উঠলো পৌরসভা, আই. আই. টি. । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলাইকুন্ডার জঙ্গল এলাকায় তৈরি করা হয় বিমানঘাঁটি। অহল্যাবাঈ রোড  সম্প্রসারিত করে গড়ে উঠলো ' ওডিশা ট্র্যাঙ্ক রোড'। বাংলা-ওডিশা যোগাযোগ বাড়ায় খড়্গপুর মেদিনীপুর বাজার এলাকায় পরিনত হয়।

    লোকমতে খড়গেশ্বর শিবের নামানুসারে এই এলাকার নাম হয়েছিল খড়্গপুর। আরও শোনা যায় যে রেল লাইন পাতার সময়ে নাকি রোজ রাতে হাতির পাল এসে লাইন উপড়ে দিয়ে যেত। এই দেখে রেলের ইঞ্জিনিয়াররা সেখানে উঁচু সেতু তৈরি করে দেন, যাতে হাতিরা সহজে নিচ দিয়ে গলে যেতে পারে । সেই থেকে এই সেতুর নাম হয় হাতি গলা পুল।

    এই প্রতিবেদনটি আপনাদের কেমন লাগলো নিচে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করুন।

    [ আরও পড়ুনঃ বিধান চন্দ্র রায় মাত্র এক টাকায় কিনেছিলেন আজকের সল্টলেক। সল্টলেক সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য। ]

    [ আরও পড়ুন ঃ জানা অজানা রবীন্দ্রনাথ। ]

    [ আরও পড়ুন ঃ'দাদা সাহেব ফালকে' পুরস্কার পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। কেন জানেন? ]

    [আরও পড়ুন ঃ ট্রেন-এ শৌচালয় অন্তর্ভুক্তির পিছনে অবদান কার জানেন? ]


    তথ্যসুত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা

    Monday, May 21, 2018

    বিধান চন্দ্র রায় মাত্র এক টাকায় কিনেছিলেন আজকের সল্টলেক। সল্টলেক সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।

    May 21, 2018 0
    বিধান চন্দ্র রায় মাত্র এক টাকায় কিনেছিলেন আজকের সল্টলেক। সল্টলেক সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।
    সল্টলেক তথা বিধান নগর, পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার উত্তর পূর্বে অবস্থিত একটি উপনগরী তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রধান তথ্যপ্রযুক্তি উপকেন্দ্র। আমরা যারা একবার হলেও সল্টলেক গিয়েছি, তারা জানি এই জায়গাটি কলকাতার বাকি অঞ্চলের মত ইতিউতি অবিন্যস্ত ভাবে গড়ে ওঠেনি। এটি একটি পরিকল্পিত শহর।




       দেশভাগের সময় অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর শরণার্থী অধুনা বাংলাদেশ থেকে চলে আসায় কলকাতার জনঘনত্ব হঠাৎ করে বেড়ে যায়। এত বিপুল পরিমান মানুষের বাসস্থানের বন্দোবস্ত করার জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে বিকল্প জায়গার। তখন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্রের নজর যায় কলকাতার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের দিকে।





       ১৯৫৩ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর বিধান চন্দ্রের আমন্ত্রনে ডাচ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি 'NEDECO' উত্তরের লবনাক্ত হ্রদ্গুলিতে সার্ভে শুরু করে। ১৯৫৫ সালে ওই হ্রদের উত্তরের ১৭৩.৭ একর জমি অধিগ্রহনের জন্য একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এই পুরো জমিটি বিধান চন্দ্র রায় তৎকালীন মৎস্যমন্ত্রী হেমচন্দ্র নস্করের কাছ থেকে
      মাত্র এক টাকার বিনিময়ে কিনে নেন। এরপর ধাপে ধাপে নগর পত্তনের কাজ শুরু হয়। সত্তরের দশকের শুরুর দিকে এখানে জনবসতি গড়ে উঠতে থাকে।

    [ আরও পড়ুন ঃ জানা অজানা রবীন্দ্রনাথ। ]


    [ আরও পড়ুন ঃ ভারতের সর্বপ্রথম এবং বর্তমানে প্রবীনতম ভোটার কে জানেন? ]


    [ আরও পড়ুন ঃ একটু দেরী, পন্ডিচেরী।]



    [ আরও পড়ুন ঃ আন্দামানের ইতিকথা ]


       ইতিমধ্যে লোকমুখে এবং মিডিয়ায় সল্টলেক নিয়ে জোর গুঞ্জন শুরু হয়। লোকে বলতে থাকে বালি মাটি দিয়ে হ্রদ ভরাট করে গড়ে ওঠা বাড়ি ঘর যথেষ্ট ঝুঁকিপ্রবন। এতে জনমানসে সল্ট লেকের প্রতি বিরুপ ধারনা গড়ে ওঠে এবং সেখানে জায়গা কেনার উৎসাহে ভাঁটা পড়ে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারের তরফে ক্রেতাদের আশ্বস্ত করা হলে এবং লিজের শর্ত শিথিল করা হলে পুনরায় ক্রেতাদের উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় প্রচুর শরণার্থী এপারে চলে আসে। তাদের সেক্টর ২ এর শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়। তার কিছুদিন পরে কংগ্রেস এর অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় সল্টলেকে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সেখানে সদ্য গড়ে ওঠা একটি অতিথি আবাসনে রাখা হয় যা পরে 'ইন্দিরা ভবন' নামে পরিচিত হয়।





       ইতিহাসে সল্টলেকের প্রথম উল্লেখ মেলে সিরাজ-উদ্-দৌল্লার সময়। ১৭৫৬ সালের ১৭ই জুন বাংলার নবাব সিরাজ লর্ড ক্লাইভের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে আক্রমন করার সময় এখানে ঘাঁটি গাড়েন। সিরাজের মৃত্যুর পর এই এলাকার মালিকানা চলে যায় মিরজাফর এবং তার উত্তরসূরি দের অধীনে। ধীরে ধীরে এই এলাকার মালিকানা হাতবদল হয়ে এসে পুঞ্জিভূত হয় স্থানীয় জমিদার দের হাতে। তাঁরা এখানে মাছ চাষ করতেন। ১৮৬৫ সালে ইংরেজ সরকার এই এলাকা পুনরায় অধিগ্রহন  করে এবং ১৮৭৮ সালে নন্দলাল দাস ও দুর্গাচরণ কুণ্ডকে লিজ দিয়ে দেয় ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত। ১৮৯০ সালে সরকার ৩৪০০ টাকার বিনিময়ে ভবনাথ সেনকে ১৮৯৯ সাল পর্যন্ত লিজ দেয়। ১৯০৬ সালে পুনরায় ১০ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয় ৯৭৫০ টাকার বিনিময়ে। ১৯১৬ সালের পর আর কোনো নথি পাওয়া যায়নি।


      ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর কলকাতায় রীতিমতো জনবিস্ফোরণ হয়। বাসস্থানের অভাবে প্রয়োজন হয়ে পড়ে বিকল্প ব্যবস্থার। কিন্তু কলকাতার কেবলমাত্র উত্তর দক্ষিণেই পুনর্বিন্যাস সম্ভব তাই বিধান চন্দ্র রায় কলকাতার ৩০ মাইল উত্তরে কল্যাণী শহরের সূচনা করেন সহায় সম্বলহীন শরণার্থীদের বাসস্থানের জন্য। কিন্তু তা ফলপ্রসু না হওয়ায় তাঁর নজর যায় সল্টলেকের দিকে।



    Bidhan Ch. Ray and Ajay Mukherjee inaugurating the work of Salt Lake




      ১৯৬২ সালের ১৬ই এপ্রিল ডাচ কোম্পানির থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়ে বিধান বাবু তৎকালীন সেচমন্ত্রী অজয় মুখার্জি-কে সাথে নিয়ে সল্টলেকের জমি ভরাট করার কাজের সূচনা করেন। সেক্টর ওয়ানের কাজ শেষ হওয়ার পর ১৯৬৬ সালে জমি বণ্টন শুরু হয়। ১৯৬৯ সেক্টর ২ এবং ৩  এর কাজ শেষ হয়। সল্টলেকের প্রথম বাসিন্দা ছিলেন জীতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং তাঁর পরিবার। ১৯৭৩ সালের ৫ই এপ্রিল একটি সার্কুলার জারি করে সল্টলেকের নাম পরিবর্তন করে এর জনকের নামে নাম রাখা হয় ' বিধান নগর '।

    প্রতিবেদনটি আপনাদের কেমন লাগলো নিচে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করুন।


    [ আরও পড়ুন ঃ 'দাদা সাহেব ফালকে' পুরস্কার পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। কেন জানেন?]


    [ আরও পড়ুন ঃ প্রত্যাখ্যাত শাহেনশাহ্]


    [ আরও পড়ুন ঃ'লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন'- কে এই গৌরী সেন?]



    [ আরও পড়ুন ঃ ট্রেন-এ শৌচালয় অন্তর্ভুক্তির পিছনে অবদান কার জানেন?]