সল্টলেক তথা বিধান নগর, পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার উত্তর পূর্বে অবস্থিত একটি উপনগরী তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রধান তথ্যপ্রযুক্তি উপকেন্দ্র। আমরা যারা একবার হলেও সল্টলেক গিয়েছি, তারা জানি এই জায়গাটি কলকাতার বাকি অঞ্চলের মত ইতিউতি অবিন্যস্ত ভাবে গড়ে ওঠেনি। এটি একটি পরিকল্পিত শহর।
দেশভাগের সময় অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর শরণার্থী অধুনা বাংলাদেশ থেকে চলে আসায় কলকাতার জনঘনত্ব হঠাৎ করে বেড়ে যায়। এত বিপুল পরিমান মানুষের বাসস্থানের বন্দোবস্ত করার জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে বিকল্প জায়গার। তখন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্রের নজর যায় কলকাতার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের দিকে।
১৯৫৩ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর বিধান চন্দ্রের আমন্ত্রনে ডাচ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি 'NEDECO' উত্তরের লবনাক্ত হ্রদ্গুলিতে সার্ভে শুরু করে। ১৯৫৫ সালে ওই হ্রদের উত্তরের ১৭৩.৭ একর জমি অধিগ্রহনের জন্য একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এই পুরো জমিটি বিধান চন্দ্র রায় তৎকালীন মৎস্যমন্ত্রী হেমচন্দ্র নস্করের কাছ থেকে মাত্র এক টাকার বিনিময়ে কিনে নেন। এরপর ধাপে ধাপে নগর পত্তনের কাজ শুরু হয়। সত্তরের দশকের শুরুর দিকে এখানে জনবসতি গড়ে উঠতে থাকে।
[ আরও পড়ুন ঃ জানা অজানা রবীন্দ্রনাথ। ]
[ আরও পড়ুন ঃ ভারতের সর্বপ্রথম এবং বর্তমানে প্রবীনতম ভোটার কে জানেন? ]
[ আরও পড়ুন ঃ একটু দেরী, পন্ডিচেরী।]
[ আরও পড়ুন ঃ আন্দামানের ইতিকথা ]
ইতিমধ্যে লোকমুখে এবং মিডিয়ায় সল্টলেক নিয়ে জোর গুঞ্জন শুরু হয়। লোকে বলতে থাকে বালি মাটি দিয়ে হ্রদ ভরাট করে গড়ে ওঠা বাড়ি ঘর যথেষ্ট ঝুঁকিপ্রবন। এতে জনমানসে সল্ট লেকের প্রতি বিরুপ ধারনা গড়ে ওঠে এবং সেখানে জায়গা কেনার উৎসাহে ভাঁটা পড়ে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারের তরফে ক্রেতাদের আশ্বস্ত করা হলে এবং লিজের শর্ত শিথিল করা হলে পুনরায় ক্রেতাদের উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় প্রচুর শরণার্থী এপারে চলে আসে। তাদের সেক্টর ২ এর শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়। তার কিছুদিন পরে কংগ্রেস এর অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় সল্টলেকে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সেখানে সদ্য গড়ে ওঠা একটি অতিথি আবাসনে রাখা হয় যা পরে 'ইন্দিরা ভবন' নামে পরিচিত হয়।
ইতিহাসে সল্টলেকের প্রথম উল্লেখ মেলে সিরাজ-উদ্-দৌল্লার সময়। ১৭৫৬ সালের ১৭ই জুন বাংলার নবাব সিরাজ লর্ড ক্লাইভের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে আক্রমন করার সময় এখানে ঘাঁটি গাড়েন। সিরাজের মৃত্যুর পর এই এলাকার মালিকানা চলে যায় মিরজাফর এবং তার উত্তরসূরি দের অধীনে। ধীরে ধীরে এই এলাকার মালিকানা হাতবদল হয়ে এসে পুঞ্জিভূত হয় স্থানীয় জমিদার দের হাতে। তাঁরা এখানে মাছ চাষ করতেন। ১৮৬৫ সালে ইংরেজ সরকার এই এলাকা পুনরায় অধিগ্রহন করে এবং ১৮৭৮ সালে নন্দলাল দাস ও দুর্গাচরণ কুণ্ডকে লিজ দিয়ে দেয় ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত। ১৮৯০ সালে সরকার ৩৪০০ টাকার বিনিময়ে ভবনাথ সেনকে ১৮৯৯ সাল পর্যন্ত লিজ দেয়। ১৯০৬ সালে পুনরায় ১০ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয় ৯৭৫০ টাকার বিনিময়ে। ১৯১৬ সালের পর আর কোনো নথি পাওয়া যায়নি।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর কলকাতায় রীতিমতো জনবিস্ফোরণ হয়। বাসস্থানের অভাবে প্রয়োজন হয়ে পড়ে বিকল্প ব্যবস্থার। কিন্তু কলকাতার কেবলমাত্র উত্তর দক্ষিণেই পুনর্বিন্যাস সম্ভব তাই বিধান চন্দ্র রায় কলকাতার ৩০ মাইল উত্তরে কল্যাণী শহরের সূচনা করেন সহায় সম্বলহীন শরণার্থীদের বাসস্থানের জন্য। কিন্তু তা ফলপ্রসু না হওয়ায় তাঁর নজর যায় সল্টলেকের দিকে।
১৯৬২ সালের ১৬ই এপ্রিল ডাচ কোম্পানির থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়ে বিধান বাবু তৎকালীন সেচমন্ত্রী অজয় মুখার্জি-কে সাথে নিয়ে সল্টলেকের জমি ভরাট করার কাজের সূচনা করেন। সেক্টর ওয়ানের কাজ শেষ হওয়ার পর ১৯৬৬ সালে জমি বণ্টন শুরু হয়। ১৯৬৯ সেক্টর ২ এবং ৩ এর কাজ শেষ হয়। সল্টলেকের প্রথম বাসিন্দা ছিলেন জীতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং তাঁর পরিবার। ১৯৭৩ সালের ৫ই এপ্রিল একটি সার্কুলার জারি করে সল্টলেকের নাম পরিবর্তন করে এর জনকের নামে নাম রাখা হয় ' বিধান নগর '।
প্রতিবেদনটি আপনাদের কেমন লাগলো নিচে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করুন।
[ আরও পড়ুন ঃ 'দাদা সাহেব ফালকে' পুরস্কার পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। কেন জানেন?]
[ আরও পড়ুন ঃ প্রত্যাখ্যাত শাহেনশাহ্]
[ আরও পড়ুন ঃ'লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন'- কে এই গৌরী সেন?]
[ আরও পড়ুন ঃ ট্রেন-এ শৌচালয় অন্তর্ভুক্তির পিছনে অবদান কার জানেন?]
দেশভাগের সময় অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর শরণার্থী অধুনা বাংলাদেশ থেকে চলে আসায় কলকাতার জনঘনত্ব হঠাৎ করে বেড়ে যায়। এত বিপুল পরিমান মানুষের বাসস্থানের বন্দোবস্ত করার জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে বিকল্প জায়গার। তখন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্রের নজর যায় কলকাতার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের দিকে।
১৯৫৩ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর বিধান চন্দ্রের আমন্ত্রনে ডাচ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি 'NEDECO' উত্তরের লবনাক্ত হ্রদ্গুলিতে সার্ভে শুরু করে। ১৯৫৫ সালে ওই হ্রদের উত্তরের ১৭৩.৭ একর জমি অধিগ্রহনের জন্য একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এই পুরো জমিটি বিধান চন্দ্র রায় তৎকালীন মৎস্যমন্ত্রী হেমচন্দ্র নস্করের কাছ থেকে মাত্র এক টাকার বিনিময়ে কিনে নেন। এরপর ধাপে ধাপে নগর পত্তনের কাজ শুরু হয়। সত্তরের দশকের শুরুর দিকে এখানে জনবসতি গড়ে উঠতে থাকে।
[ আরও পড়ুন ঃ জানা অজানা রবীন্দ্রনাথ। ]
[ আরও পড়ুন ঃ ভারতের সর্বপ্রথম এবং বর্তমানে প্রবীনতম ভোটার কে জানেন? ]
[ আরও পড়ুন ঃ একটু দেরী, পন্ডিচেরী।]
[ আরও পড়ুন ঃ আন্দামানের ইতিকথা ]
ইতিমধ্যে লোকমুখে এবং মিডিয়ায় সল্টলেক নিয়ে জোর গুঞ্জন শুরু হয়। লোকে বলতে থাকে বালি মাটি দিয়ে হ্রদ ভরাট করে গড়ে ওঠা বাড়ি ঘর যথেষ্ট ঝুঁকিপ্রবন। এতে জনমানসে সল্ট লেকের প্রতি বিরুপ ধারনা গড়ে ওঠে এবং সেখানে জায়গা কেনার উৎসাহে ভাঁটা পড়ে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারের তরফে ক্রেতাদের আশ্বস্ত করা হলে এবং লিজের শর্ত শিথিল করা হলে পুনরায় ক্রেতাদের উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় প্রচুর শরণার্থী এপারে চলে আসে। তাদের সেক্টর ২ এর শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়। তার কিছুদিন পরে কংগ্রেস এর অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় সল্টলেকে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সেখানে সদ্য গড়ে ওঠা একটি অতিথি আবাসনে রাখা হয় যা পরে 'ইন্দিরা ভবন' নামে পরিচিত হয়।
ইতিহাসে সল্টলেকের প্রথম উল্লেখ মেলে সিরাজ-উদ্-দৌল্লার সময়। ১৭৫৬ সালের ১৭ই জুন বাংলার নবাব সিরাজ লর্ড ক্লাইভের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে আক্রমন করার সময় এখানে ঘাঁটি গাড়েন। সিরাজের মৃত্যুর পর এই এলাকার মালিকানা চলে যায় মিরজাফর এবং তার উত্তরসূরি দের অধীনে। ধীরে ধীরে এই এলাকার মালিকানা হাতবদল হয়ে এসে পুঞ্জিভূত হয় স্থানীয় জমিদার দের হাতে। তাঁরা এখানে মাছ চাষ করতেন। ১৮৬৫ সালে ইংরেজ সরকার এই এলাকা পুনরায় অধিগ্রহন করে এবং ১৮৭৮ সালে নন্দলাল দাস ও দুর্গাচরণ কুণ্ডকে লিজ দিয়ে দেয় ১৮৮৭ সাল পর্যন্ত। ১৮৯০ সালে সরকার ৩৪০০ টাকার বিনিময়ে ভবনাথ সেনকে ১৮৯৯ সাল পর্যন্ত লিজ দেয়। ১৯০৬ সালে পুনরায় ১০ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয় ৯৭৫০ টাকার বিনিময়ে। ১৯১৬ সালের পর আর কোনো নথি পাওয়া যায়নি।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর কলকাতায় রীতিমতো জনবিস্ফোরণ হয়। বাসস্থানের অভাবে প্রয়োজন হয়ে পড়ে বিকল্প ব্যবস্থার। কিন্তু কলকাতার কেবলমাত্র উত্তর দক্ষিণেই পুনর্বিন্যাস সম্ভব তাই বিধান চন্দ্র রায় কলকাতার ৩০ মাইল উত্তরে কল্যাণী শহরের সূচনা করেন সহায় সম্বলহীন শরণার্থীদের বাসস্থানের জন্য। কিন্তু তা ফলপ্রসু না হওয়ায় তাঁর নজর যায় সল্টলেকের দিকে।
Bidhan Ch. Ray and Ajay Mukherjee inaugurating the work of Salt Lake |
১৯৬২ সালের ১৬ই এপ্রিল ডাচ কোম্পানির থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়ে বিধান বাবু তৎকালীন সেচমন্ত্রী অজয় মুখার্জি-কে সাথে নিয়ে সল্টলেকের জমি ভরাট করার কাজের সূচনা করেন। সেক্টর ওয়ানের কাজ শেষ হওয়ার পর ১৯৬৬ সালে জমি বণ্টন শুরু হয়। ১৯৬৯ সেক্টর ২ এবং ৩ এর কাজ শেষ হয়। সল্টলেকের প্রথম বাসিন্দা ছিলেন জীতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং তাঁর পরিবার। ১৯৭৩ সালের ৫ই এপ্রিল একটি সার্কুলার জারি করে সল্টলেকের নাম পরিবর্তন করে এর জনকের নামে নাম রাখা হয় ' বিধান নগর '।
প্রতিবেদনটি আপনাদের কেমন লাগলো নিচে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করুন।
[ আরও পড়ুন ঃ 'দাদা সাহেব ফালকে' পুরস্কার পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। কেন জানেন?]
[ আরও পড়ুন ঃ প্রত্যাখ্যাত শাহেনশাহ্]
[ আরও পড়ুন ঃ'লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন'- কে এই গৌরী সেন?]
[ আরও পড়ুন ঃ ট্রেন-এ শৌচালয় অন্তর্ভুক্তির পিছনে অবদান কার জানেন?]
No comments:
Post a Comment